শাহ্‌ আব্দুল করিম এর জীবনী

  বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন ধল-আশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান। কাগমারী সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করে আর মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্য তার জীবনের মধুরতম স্মৃতি।২০০৯ সালে ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
Baul Somrat Shah Abdul Karim

Legend Shah Abdul Karim

‘গাড়ি চলে না চলে না, চলে না রে গাড়ি চলে না, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, বন্দে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে, বসন্ত বাতাসে, সখি, কুঞ্জ সাজাও গো এ ধরনের অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। শাহ আবদুল করিম। লোকে বলে বাউল সম্রাট। তিনি এমন একজন মানুষ যিনি বাংলার ভাব বাংলার প্রকাশের বাংলার লোকজ সঙ্গীতের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন অনায়াসে; অনায়াসে ভাটি অঞ্চলের সুখদুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারীপুরুষের মনের কথা ছোট ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষনীয় সুরে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম শাহ করিমের বিদগ্ধ আত্মাটির সন্ধান পেয়ে গেছে। করিমের চিন্তার যে একটি কল্যাণকর দিক রয়েছে সেটিও নতুন প্রজন্ম বুঝে গিয়েছে। এখন প্রয়োজন করিমকে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসের ধারার সঙ্গে গ্রহিত করা। শাহ্ আবদুল করিম তাঁর স্ত্রীকে মনে করতেন মুর্শিদ। ‘মুর্শিদ’ শব্দটার অর্থ-নেতা (আধ্যাত্মিক অর্থে অবশ্য)। শাহ আবদুল করিমের স্ত্রীর নাম ছিল আবতাবুন্নেছা। করিম আদর করে ডাকতেন: ‘সরলা’। স্ত্রীকে ‘মুর্শিদ’ মনে করাটা সহজ নয়। অনেক শিক্ষিত আধুনিক পুরুষও এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।

শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় কিছু গান

বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গাড়ি চলে না আমি কূলহারা কলঙ্কিনী কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া কোন মেস্তরি নাও বানাইছে কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু বসন্ত বাতাসে সইগো আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও আমি তোমার কলের গাড়ি সখী কুঞ্জ সাজাও গো জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে মানুষ হয়ে তালাশ করলে আমি বাংলা মায়ের ছেলে

প্রকাশিত বই

বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে।সম্প্রতি সিলেট জেলা মিলনায়তনে তাঁর রচনাসমগ্র (অমনিবাস)-এর মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। বইগুলি হলো। আফতাব সংগীত গণ সংগীত কালনীর ঢেউ ভাটির চিঠি কালনীর কূলে দোলমেলা

 সম্মাননা

বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলা একাডেমি তার দশটি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। এছাড়া দ্বিতীয় সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এই বাউল সম্রাটকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ২০০০ সালে কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক পান। বাউল সাধক শাহ আবদুল জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেছেন দরিদ্রতার সাথে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেও তা যথেষ্ঠ নয়।উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে ‘জীবন্ত কিংবদন্তীঃ বাউল শাহ আবদুল করিম’ নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। এই অ্যালবামের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তাঁর বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।