শাহ আব্দুল করিম

 

সঙ্গীত সাধনা

স্বশিক্ষিত বাউল সম্রাট এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। বাউলসাধক তাঁর জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেছেন দরিদ্রতার সাথে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেও তা তিনি কখনোই গ্রহণ করেননি। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে জীবন্ত কিংবদন্তীঃ বাউল শাহ আব্দুল করিম নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। এই অ্যালবামের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তার বার্ধক্যজনিত রোগের চিকি‍ৎসার জন্য তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়। ২০০৭ সালে বাউলের জীবদ্দশায় শাহ আব্দুল করিমের জীবন ও কর্মভিত্তিক একটি বই প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়, ‘শাহ আব্দুল করিম সংবর্ধন-গ্রন্থ’ (উৎস প্রকাশন) নামের এই বইটি সম্পাদনা করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২২ মে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও খান বাহাদুর এহিয়া ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি ড. জাফর আহমেদ খানের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গ্রন্থ ‘শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র’ প্রকাশিত হয়। বইটির পরিবেশক বইপত্র।

 

শাহ আব্দুল করিম এর জনপ্রিয় কিছু গানঃ

বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গাড়ি চলে না
রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না
তুমি রাখ কিবা মার
ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুরপংখী নাও
তোমার কি দয়া লাগেনা
আমি মিনতি করিরে
তোমারও পিরিতে বন্ধু
সাহস বিনা হয়না কভু প্রেম
মোদের কি হবেরে ,
মানুষ হয়ে তালাশ করলে
আমি বাংলা মায়ের ছেলে
আমি কূলহারা কলঙ্কিনী
কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া
কোন মেস্তরি নাও বানাইছে
কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু
মন মিলে মানুষ মিলে, সময় মিলেনা
সখী তুরা প্রেম করিওনা
কাছে নেওনা ,দেখা দেওনা
মন মজালে,ওরে বাউলা গান
আমার মাটির পিনজিরাই সোনার ময়নারে
নতুন প্রেমে মন মজাইয়া
বসন্ত বাতাসে সইগো
আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু
মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও
আমি তোমার কলের গাড়ি
সখী কুঞ্জ সাজাও গো
জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে
যে দুংখ মোর মনে
হুরু থাকতে,আমরা কত খেইর (খেইল) খেলাইতাম
হাওয়াই উরে আমার
গান গাই আমার মনরে বুঝাই
দুনিয়া মায়ার জালে
দয়া কর দয়াল তোমার দয়ার বলে
আগের বাহাদুরি গেল কই
মন বান‍দিব কেমনে
আমার মন উদাসি
আমি তরে চাইরে বন্ধু
কাঙ্গালে কি পাইব তোমারে
বন্ধুরে কই পাব
এখন ভাবিলে কি হবে
আসি বলে গেল বন্ধু আইলনা
আমি কি করি উপায়
প্রান বন্ধু আসিতে কত দুরে
বন্ধু ত আইলনাগু সখী
আমি গান গাইতে পারিনা
খুজিয়া পাইলাম নারে বন্ধু
ভব সাগরের নাইয়া

শাহ আব্দুল করিম এর প্রকাশিত বইসমূহ

বাউল শাহ আব্দুল করিমের এ পর্যন্ত ৭টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে তার রচনাসমগ্র (অমনিবাস)-এর মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়াও সুমনকুমার দাশ সম্পাদিত শাহ আব্দুল করিম স্মারকগ্রন্থ (অন্বেষা প্রকাশন) তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। এর আগে-পরে শাহ আব্দুল করিমকে নিয়ে সুমনকুমার দাশের ‘বাংলা মায়ের ছেলে : শাহ আবদুল করিম জীবনী’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘সাক্ষাৎকথায় শাহ আব্দুল করিম’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘শাহ আবদুল করিম’ (অন্বেষা প্রকাশন), ‘বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম’ (উৎস প্রকাশন), ‘গণগীতিকার শাহ আবুল করিম’ (উৎস প্রকাশন) প্রকাশিত হয়। সর্ব শেষ ২০১৬ সালে ঢাকার প্রখ্যাত প্রকাশনাসংস্থা প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয় সুমনকুমার দশের ‘শাহ আব্দুল করিম : জীবন ও গান’ বইটি। এ বইটি ইতোমধ্যেই একটি প্রামণ্য জীবনী হিসেবে বোদ্ধামহলে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। এ বইটিতে করিমের নির্বাচিত বেশ কিছু গানও সংকলিত হয়েছে। শাহ আব্দুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস সাইমন জাকারিয়া রচিত “কূলহারা কলঙ্কিনী” প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে।

 

বইয়ের তালিকা

আফতাব সঙ্গীত (১৩৫৫ বাংলা; আনুমানিক ১৯৪৮)
গণ সঙ্গীত (১৯৫৭)
কালনীর ঢেউ (১৩৮৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন; ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর)
ধলমেলা (১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন; ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি)
ভাটির চিঠি (১১ বৈশাখ ১৪০৫; ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮)
কালনীর কূলে (নভেম্বর ২০০১)
শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র (সংকলন ও গ্রন্থন: শুভেন্দু ইমাম, ২২ মে ২০০৯)

 

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া