ভাটির পুরুষ (bhatir purush) পার্ট-১। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের উপরে নির্মিত আমার দেখা সেরা তথ্যচিত্র।
মহাজনে বানাইছিল ময়ূরপঙ্খি নাও
১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯। বেলা দেড়টার দিকে কতগুলো নৌকার বহর বেরিয়েছে ধলগ্রামের উদ্দেশে। এর মধ্যে একটি বেশ বড় নৌকা। তার ছাদের ওপর অনেক ফুলের মালার আড়ত। নৌকাটিও সাজানো। ময়ূরপঙ্খি নাও যদিও নয়, তারপরও লতাপাতা, ফুল, ময়ূরের পেখমের মতো নকশি করা তার খোল। বাদবাকি নৌকাগুলোও সুন্দর। ছোট ছোট, ২০-২৫টা তো হবেই। বাকি সব নৌকার চোখ ওই বড় নৌকাটির দিকে। ওই নৌকায় আজ সওয়ারি হয়েছেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম।
নৌকা ছুটে চলে ৫ কিলোমিটার পথ দূরে উজানধল গ্রামের দিকে। ভরা বর্ষায় হাওরের পানির ওপর সূর্যের আলো পড়ে চিকমিক করে ওঠে পানির প্রতিফলন আর ঝিলমিল ঝিলমিল করে সেই ময়ূরপঙ্খি নাও। সেই হাওরে আজ তার ময়ূরপঙ্খি নাওয়ের বহর ছুটে চলে গ্রামের মসজিদের দিকে, তাঁর তৃতীয়বার জানাজা পড়ানোর জন্য। ধলগ্রামের ওই মসজিদ ও জানাজা এ দুটিই তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর প্রতি সদয় ছিল না। ‘জানাজা’ মৃতের জন্য এমন কোনো অত্যাবশ্যকীয় বিষয় নয় বলেই তিনি আমার ক্যামেরায় বলেছেন। মরার পর শরীরের পাঁচটি পদার্থ (মাটি, বাতাস, আগুন, পানি) যে যার সঙ্গে মিশে যাবে। জানাজা কাউকে বাঁচাতেও পারে না, মারতেও পারে না। বাউলেরা যেহেতু প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাস করেন না, নিজস্ব মুর্শিদের দীক্ষা থেকে নিজেদের মতো করে সৃষ্টিকর্তার আরাধনা এবং তাঁকে পাওয়ার চেষ্টা করেন, সেহেতু তাঁর নিজের বিশ্বাস নিয়েই তিনি জীবনযাপন করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমাজের দায়িত্ব থেকেই তাঁকে আজ তৃতীয় জানাজার জন্য নিয়ে যাচ্ছি আমরা তাঁরই গ্রামের মসজিদে, যে মসজিদে একবার ঈদের দিন জামাতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তাঁকে জন্মভূমির গ্রামটিও ত্যাগ করতে হয়েছিল। আজ সেই মসজিদের ইমাম জোহরের নামাজ শেষে তাঁর জানাজা পড়ালেন।
এবার শাহ আবদুল করিমের বাড়ি ফেরার পালা। এই বাড়িতে ছয় বছর আগে প্রথম গিয়ে বেশ কিছু জিনিস দেখে অবাকই হয়েছিলাম। বাড়িতে ঢোকার আগে ইটের দেয়াল তুলে রাখা হয়েছিল একটা বড় ঘরে। করিম বলেছিলেন, ‘আমি ইস্কুল বানাতে চাই এখানে, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে বাউল ফকিরেরা এসে বসে ধ্যান করতে পারবে, গান গাইতে পারবে, রাতের বেলা এখানে শুয়ে ঘুমাতেও পারবে।’ ছয় বছরের ব্যবধানে আজ এই ঘরটি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাঁর ছেলে নূরজালালের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাউল একাডেমির একটা সাইনবোর্ডও পড়েছে ঘরটির সামনের দেয়ালে। ঘরটি পার হয়ে তাঁর মূল বাড়ির ভেতরে ঢুকে লালসালু টাঙানো একটা বেড়া দেওয়া দোচালা টিনের ঘর দেখিয়ে নূরজালাল জানিয়েছিলেন, এটা তাঁর মায়ের কবর। বাবা এই ঘরে প্রায়ই এসে ফুল দিয়ে যান। যেকোনো উৎসব-পার্বণে বাজার থেকে কাগজের ফুল কিনে এনে পুরো ঘরটিকে সাজান। এর পাশে আরেকটি কবরের জায়গা আছে। ওখানে বাবার কবর হবে।
বাদশার অনেক দৌলত ছিল বলে মমতাজমহলের জন্য তিনি ইশা আফিন্দিকে ইতালি থেকে এনে সাদা মার্বেলে বানিয়েছিলেন তাজমহল। বাদশার মতো ধন না থাকলেও তাঁর চেয়ে বড় মন আছে বলে করিম নিজ হাতে বানিয়েছেন এই ঘর। করিমের সরলামহল। এই ঘরের সামনে বছর চারেক আগের এক বিকেলে বসেছিলেন করিম আমার ক্যামেরার সামনে। ঘরের ভেতরে শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে আঙুল দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ওই মানুষটি (তাঁর স্ত্রী সরলা) আমার জীবনে না এলে আমি করিম হতে পারতাম না। দুই দিনের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি ঘরে খাবার না রেখে, দুই মাস পরে যখন বাড়ি ফিরে এসেছি, আমার স্ত্রী কখনো আমাকে জানায়নি যে অন্য বাড়িতে ঝিগিরি করে সে তাঁর পেট চালিয়েছে। বরং সে আমাকে বলেছে, আমি যদি আপনাকে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখি, আপনি বাইরে যাবেন কেমনে? আর আপনি যদি বাইরের মানুষের সঙ্গে না মেশেন, তবে জগৎ চিনবেন কেমনে আর গান বানাইবেন কেমনে?’ স্ত্রীর এই কথাগুলো মনে পড়ার পর করিম সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
plz baki part gulo diben we can,t miss it
This place Dhol village far away from urban area.It’s taste different from other area. He fill the nature ,grown up with nature, visualize the people how they lived how they survive — and all those create Shah Abdul Karim
miss u so much guru…………….